বরাক উপত্যকার পরিচয়হীন বাঙালি
১৬ অক্টোবর ১৯০৫ ইংরেজিতে ভাগ হয় আমাদের বাংলা, পশ্চিমবঙ্গ আর পূর্ববঙ্গ । আগের পশ্চিমবঙ্গ ছিল বিহার, উড়িষ্যা নিয়ে আর পূর্ববঙ্গ এখনকার অসম নিয়ে ।
তার কিছুদিন পর সময় আসে ১৯৪৭ দেশের বিভাজনের । দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায় দেশ । এক ভাগ ভারত আর অন্য ভাগ পাকিস্তান ।
পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অংশ হয় আর পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের, পূর্ববঙ্গের নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশ । পূর্ববঙ্গের সাথে জড়িত থাকা অসম আবার ভারতেরই অংশ হয় । তখন অসম হয় ভারতের একটি রাজ্য, যে রাজ্যে অসমিয়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি থাকায় রাজ্যটি হয়ে উঠে অসমিয়া রাজ্য । কিন্তু অসমের এমনও একটি অঞ্চল ছিল যেখানে ছিল বাঙালি বহুল, যে অঞ্চলের সাথে অসম রাজ্যের কোন মিল ছিল না বললেই চলত । অঞ্চলগুলো আজকের শিলচর, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি এক কথায় আমারা বলতে পারি বরাক উপত্যকা ।
যে অঞ্চলের প্রায় সবাই ছিল বাংলা ভাষিক, পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গের বাইরের যদি কোনো বাংলা ভূখণ্ড থেকে থাকে তো সেই ভূখণ্ডের নাম বরাক উপত্যকা । আর এই বাংলা ভূখণ্ডে বাংলা ভাষার জন্য অনেক শহীদ ও হয়েছে । এই বাংলা ভাষিক অঞ্চলের অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল সেই সময় এমনকি আজ ও ।
যখন পূর্ববঙ্গের সাথে জড়িত ছিল ওই অঞ্চলগুলো তখন ওই অঞ্চলগুলোর পরিচয় ছিল অনেকটাই । কিন্তু দেশের বিভাজনের পর ওই বাংলা ভাষিক অঞ্চলগুলো হয়ে পড়েছিল বিচ্ছিন্ন, হয়ে পড়েছিল পরিচয়হীন ।
এই পরিচয়হীন বাংলার বুকে আরো ঝড় নেমে আসে ১৯৬০ সালে যখন অসম সরকার ওই বাংলা ভাষিক অঞ্চলগুলোর উপর জোর করে অসমিয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল । কিন্তু বাংলা ভাষিক অঞ্চলগুলোর কাছে অসমিয়া ভাষাটি ছিল একদম অচেনা অজানা । ওরা কিভাবে বাংলা ভাষাকে ত্যাগ করে অন্য অপরিচিত ভাষাকে নিজের করে নেবে, আর যে অঞ্চলটি ছিল একটি সম্পূর্ণ বাংলা ভূখণ্ড ।
তখন বাংলা ভাষার রক্ষার্থে বরাক উপত্যকা থেকে উঠেছিল আওয়াজ ১৯শে মে ১৯৬১ সালে ।
উঠেছিল আওয়াজ নিজের মাতৃভাষার রক্ষার্থে । উঠেছিল আওয়াজ নিজেদের পরিচয়ের জন্যে । উঠেছিল আওয়াজ বাঙালিদের অধিকারের জন্যে ।
তখন পুরো বরাক উপত্যকা থেকে স্লোগান উঠে
"জান দেবো তবু জবান দেবো না"
আর এই ভাষা সংগ্রামে শিলচরে শহীদ হয় ১১ জন ভাষা সংগ্রামী -
১ কানাইলাল নিয়োগী,
২ চন্ডীচরণ সূত্রধর,
৩ হিতেশ বিশ্বাস,
৪ সত্যেন্দ্রকুমার দেব,
৫ কুমুদরঞ্জন দাস,
৬ সুনীল সরকার,
৭ তরণী দেবনাথ,
৮ শচীন্দ্র চন্দ্র পাল,
৯ বীরেন্দ্র সূত্রধর,
১০সুকোমল পুরকায়স্থ এবং
১১ কমলা ভট্টাচার্য ।
তা ছাড়া করিমগঞ্জে ১৯৭২ সালে ১৭ আগষ্ট একজন বিজন চক্রবর্তী, ১৯৮৬ সালের ২১ জুলাই আরো দুইজন জগন্ময় দেব ও দিব্যেন্দু দাস ভাষা সংগ্রামী শহীদ হয়েছিলেন বাংলা ভাষার রক্ষার্থে ।
শুধু এখানেই বাঙালিদের উপর অত্যাচার শেষ হয়নি, অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এই বরাক উপত্যকা পরিচয়হীন বাঙালিদের । কখনো আমাদের ভাষাকে আমাদের মুখ থেকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়, আবার কখনো আমারা বরাক উপত্যকা পরিচয়হীন বাঙালিরা বিদেশি হয়ে উঠি । কেন ???
- ধীমান
Comments
Post a Comment