শহরে খুন
( প্রথম অধ্যায়)
খুন খুন খুন
সন্দেহজনকভাবে খুন এক কলেজ পড়ুয়া মেয়ের, না কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলো না কিচ্ছু,
খুনি খুব চালাকি করে করলো খুনটা, লাশের পাশে শুধু একটা ছন্দ( তুমি এসেছিলে স্বইচ্ছায়, ভালো ও বেসেছিলে তবে যেতে তো বলিনি)
ছাড়া আর কিছুই পাওয়া গেলো না, আর না কোনো ফিঙ্গারপ্রিন্ট।
খুনটা হয়েছে ২ ফেব্রুয়ারি।
পুলিশের অনেক ঘাটাঘাটির পরেও কনো সন্ধান পাওয়া গেলো না খুনির ।
খুনটা কেনো হয়েছে কে করেছে জানার আগেই আরও এক খুন
খুনের তারিখ মার্চের ৭ !
খুন হয়েছে আবার আরও এক কলেজ পড়ুয়া মেয়ের,
তার পাশে ও একটি ছন্দ,
( তোমার প্রথম ছোয়ায়,
নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছিলাম।
তোমার প্রথম ছোয়ায় নিজেকে তোমায় সোপে দিয়েছিলাম,
তবে কেন?)
এই ছন্দ ছাড়া আর কিছু এই খুনেও পাওয়া গেলো না।।
শহরে একের পর এক কলেজ পড়ুয়া মেয়ের খুন
কে করছে কেন করছে পুলিশ ধরতেই পারছে না,
না কোনো প্রমাণ না কিছু।
শুধু এক ছন্দ ছাড়া।।
অন্যদিকে জনতা, মিডিয়া উপরে পরেছে প্রশাসনের উপর।
কলেজের অনেক মেয়েরা কলেজে যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছে।।
এবার তো পুলিশের কিছু করতে হবেই ।
কেসটা হাতে নিয়েছে পুলিশ ইনিশপেক্টর অভিজিৎ রায়,
আর টিমে আরও ৩ জন, সৌমিত্র, সৌরভ আর অরিন্দম।।
অফিসে বসে অভিজিৎ :- সৌমিত্র, খুনিটাকে যেভাবেই হোক আমাদের ধরতেতো হবেই,
সৌমিত্র :- কিন্তু কি ভাবে স্যার এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ, কোনো ক্লু তো আমরা পেলাম না।
অভিজিৎ :- সৌমিত্র আমাদের কাছে ক্লু তো আছে, সেই দুটো ছন্দ,
ছন্দ দুটো পরে তো লাগছে কোনো Psycho ব্যার্থ প্রেমিক।।
সৌমিত্র :- হ্যাঁ স্যার বুঝলাম কিন্তু ছন্দ দিয়ে ওই খুনিটাকে ধরবো কি ভাবে।।
এপ্রিল ১২ আরও এক খুন,
নির্মম ভাবে আবার হত্যা আরও এক কলেজ পড়ুয়া মেয়ের!
নেই কোনো প্রমাণ
আবারও এক ছন্দ
(যতো দেখি তোমায়,
যতো শুনি তোমায়,
ততো বার দেখতে চাই তোমায়।
ততো বার শুনতে চাই তোমায়।।
তুমি যেনো কেমন অজানা,
শুধু আরও জানতে চাই । )
(দ্বিতীয় অধ্যায়)
অভিজিৎ :- খুনি আমাদের সাথে খেলছে কোনো একটা মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করছে,
সৌমিত্র :- কিন্তু কি স্যার? এভাবে চলতে থাকলে তো আরও খুন হতে থাকবে।।
অভিজিৎ :- আমাদের এই ছন্দ গুলোই নিয়ে যাবে খুনির কাছে
সৌমিত্র সবাই কে বলে দাও এই ছন্দ গুলোর ব্যাপারে খবর নিতে।
সৌমিত্র:- স্যার খুনিটা ব্যার্থ প্রেমিক তো বটেই আর তার সাথে স্যার হতে পারে খুনিটা কোনো কবি?
অভিজিৎ :- হ্যাঁ হতে তো পারে, কিন্তু এইরকম হাজার হাজার কবি পরে আছে শহরে, হতে পারে কোনো ম্যাগাজিনে এই রকমের লেখা পাওয়া যাবে। বা হতেও পারে ওর লেখা কখনো ছাপার সুযোগ পায় নি।
একটা কাজ করো সৌমিত্র, সৌরভ আর অরিন্দমকে ও বলে দাও,
আজ থেকে এখন থেকে যতো নতুন ম্যাগাজিন আছে যার মেইনলি নতুন কবিদের লেখা ছাপে ওদের বলো প্রত্যেক ম্যাগাজিন কালেকশন করতে আর পড়তে, আর আমাকে ও দিতে, আর হ্যাঁ আমাদের শহরে এইরকম ব্লগ লিখালিখি করে সব ব্লগ গুলো চেক করতে আমি ও করছি। আর তা ছাড়া শহরে কলেজ গুলোর সামনে আমাদের লোক বাড়িয়ে দাও, আমি আর খুন চাই না।।
সৌমিত্র :- ওকে স্যার হয়ে যাবে।।
এভাবে কিছু দিন ঘাটাঘাটির পর অভিজিৎ ঘরে বসে খুনিটার কথা ভাবছে, সাথে ছিল অভিজিৎ এর স্ত্রী ,
স্ত্রী :- কি হলো কি এতো ভাবছো, এইরকম হলে তো তোমার শরীর খারাপ করবে,
অভিজিৎ:- হম.. ভাবনায় ব্যাস্ত।
স্ত্রী :- হলো টা কি তোমার কিছু বলছিতো তোমায়।
অভিজিৎ : ছন্দটা বলতে থাকে,
যতো দেখি তোমায়,
যতো শুনি তোমায়,
ততো বার দেখতে চাই তোমায়।
ততো বার শুনতে চাই তোমায়।।
তুমি যেনো কেমন অজানা,
শুধু আরও জানতে চাই ।
স্ত্রী :- আরে তুমি এখন কবিতার বই টই পরছো নাকি ? তাহলে কবিতাটি পুরো ভাবে পড়ো, incomplete কেন?
অভিজিৎ :- কি! তুমি কবিতাটা জানো? কোথায় পেলে?
স্ত্রী:- (পুরো কবিতাটা পড়তে থাকে)
যতো দেখি তোমায়,
যতো শুনি তোমায়,
ততো বার দেখতে চাই তোমায়।
ততো বার শুনতে চাই তোমায়।।
তুমি যেনো কেমন অজানা,
শুধু আরও জানতে চাই ।
তোমায় দেওয়া ভালোবাসা,
প্রত্যেক বার যেনো নতুন ছোয়া।
তুমি বড্ড অজানা।।
তোমার চোখের গভীর নীলে,
প্রত্যেক বার যেনো আমি হারিয়ে যাই।
তোমার চোখের গভীর নীলে,
এভাবে সব সময় আমি হারাতে চাই।।
যতো দেখি তোমায়,
ততো বার যেনো আরও দেখতে চাই।
যতো বার শুনি তোমায়,
ততো বার যেনো আরও শুনতে চাই।।
অভিজিৎ :- তুমি কবিতাটা পেলে কোথায়? এই ছন্দ গুলোই তো খুঁজে বেড়াচ্ছি এতোদিন থেকে, আর খুঁজে বেড়াচ্ছি এই Psycho কবি কে।।
স্ত্রী :- কি! কি বলছো তুমি নীল রয়? আর খুনি এতো ভালো রোমান্টিক কবি ও, আফসোস ওর একটাই বই পাবলিস হয়েছিল আর লিমিটেড কপি বিক্রি হয়েছি আমি ওর সব গুলো কবিতা পরি।
শুনতে পাওয়া যায় ও নাকি এখন নিরুদ্দেশ, কোথায় আছে কি করছে কেউই জানেনা।।
অভিজিৎ ফোন করে সৌমিত্র কে :- সৌমিত্র, খুনি পেয়ে গেছি খুনির নাম নীল রয়।
সৌমিত্র :- কি বলছেন স্যার,
অভিজিৎ:- হ্যা তুমি এখন ই খবর নাও নীল রয় এই কবির ব্যাপারে।
আমার স্ত্রীর কাছে ওর একটা বই আছে, আমি তোমাকে সেটা WhatsApp করছি, এই বইয়ের পাবলিশার্স থেকে খবর নাও এই নীল রয় কে?
(তৃতীয় অধ্যায়)
তারপর অভিজিৎ অফিসে বসেছিল, হঠাৎ সৌমিত্রের প্রবেশ,
সৌমিত্র :- স্যার খবর তো নিলাম, ওর ঠিকানাটা ও দিয়েছে, পুরোনো মিশন রোডের দিকে কোনো এক বাড়ি, ওই জায়গায় খবর নেওয়ার পর জানা গেলো বাড়িতে একা থাকে ওই নীল রয়,
অভিজিৎ: - তবে দেরি কিসের এখনই চলো, সৌরভ গাড়িটা বের করো,
অভিজিৎ এবং ওর টিম গিয়ে পৌছায় ওই জায়গায়,
বাড়িটা খুঁজে পাওয়ার জন্য ওই পাড়ায় একটি পানের দোকানে জিজ্ঞাসা করে,
সৌরভ :- ভাই, এখানে নীল রয়ের বাড়ি কোনটা?
দোকানদার:- এইতো দাদা একটু সামনে গিয়ে বা দিকে সাদা রঙের পুরোনো বাড়ি ওইটা ই,
অভিজিৎ এবং ওর টিম খুঁজে পায় ঘরটা ঘরে গিয়ে দেখলো দরজা খোলা সব কিছু উল্টোপাল্টা করে, কিন্তু নীল রয় নেই!
সব কিছু খুঁজেও কোনো কিছু পায় নি অভিজিৎ এবং ওর টিম,
হঠাৎ অরিন্দম :- স্যার একটা চিরকুট পেলাম কি একটা ছন্দ লেখা তাঁর নিচে স্যার একটা ডাইরি পেলাম।
অভিজিৎ :- দেখি তো,
অভিজিৎ :- (ছন্দ টা পেয়ে পড়ছে) ও চিল তুমি ঘুরে ফিরে কি খোঁজছো,
ওই নীল আকাশ থেকে কাকে দেখছো।
তোমায় ছেড়ে যাওয়া প্রেম?
এই কড়া রোদ্দুরে
তুমি ওকে আজও খোঁজছো।।
রেখে গেলাম তোমার জন্য নতুন ছন্দ,
খুঁজে নিয়ো নতুন খুন।।
অরিন্দম ডাইরিটা কোথায়?
অরিন্দম :- স্যার এইতো নিন।
অভিজিৎ :- এই ডাইরিটা ভালো করে দেখতে হবে এখানেই সন্ধান পাবো এই খুনির, আমরা আসছি দেখে পালিয়েছে খুনি, ছন্দ টা ও দেখো খুব তাড়াতাড়ি লিখেছে।
খুনির না কোনো ফোটো আছে না কিচ্ছু, সাধারণ মানুষের মধ্যে মিলে গেলে কি করে ধরবো, ওকে হাতেনাতে ধরতে হবে।।
সৌমিত্র :- স্যার আমাদের কাছে সময় নেই , যা করার তারাতারি করতে হবে।
অভিজিৎ :- ডাইরিটা নিয়ে ঘরে চলে এবং ডাইরিটা ভালো করে পরতে লাগলো,
কিছু সময় পড়ার পর অভিজিৎ সৌমিত্র কে ফোন করলো,
অভিজিৎ ফোনে :- সৌমিত্র, ডাইরিটে তো শুধু ওর প্রেম জীবনের সব কিছু লিখা, ওর প্রেম কাহিনী থেকে কিভাবে আমরা ওকে খুজে বের করবো, কিছু বুঝতে পারছিনা।।
সৌমিত্র:- আরও একবার দেখেনিন স্যার যদি কিছু মিস করে যান।
অভিজিৎ :- হ্যা দেখছি তো বার বার আবার দেখছি,। ( ফোন রেখে দে)
অভিজিৎ :- ডাইরিটা পরতে পরতে)
ডাইরি :- আমি নীল গল্পটা শুরু হয় , যখন আমি ক্লাস ১২ এ পরতাম, তখন বুঝতাম না ভালোবাসার মানে কি,
হঠাৎ এক প্রাইভেট টিউশন এ দেখা, একটি মেয়ের সাথে জানিনা কেন ওকে প্রথম দেখেই ওর প্রেমে পরে গেলাম, মেয়েটি ছিল সব থেকে আলাদা। আস্তে আস্তে মেয়েটির ব্যাপারে খবর নিতে থাকলাম। তারপর জানলাম মেয়েটির নাম নীলাঞ্জনা,
আমি টিউশনে গিয়ে শুধু ওকেই দেখতাম , জানিনা কেন লাগতো ও যেমন আমাকে কিছু একটা বলতে চায়।
কিছুদিন পর দেখলাম নীলাঞ্জনা আমার দিকেও দেখতো, তখন আমার খুব ভালো লাগতো,
এভাবে কিছু দিন যাওয়ার পর ভাবলাম ওকে বলবো যে আমি ওকে ভালোবাসি, ওর সঙ্গে প্রেম করতে চাই, কিন্তু বলবো কি ভাবে, তখন এই কথা ওর বান্ধবী কে বললাম যে ওকে গিয়ে বলতে যে আমি ওকে ভালোবাসাসি, ওই দিন ওর বান্ধবী ওকে গিয়ে বললো যে আমি ওকে ভালোবাসি, নীলাঞ্জনা আমাকে না চিনেই ওর বান্ধবী কে বলে দিলো যে নীল না কি ওকে গিয়ে বলেদিস আমার প্রেম টেম ভালো লাগে না,
এই কথা শুনার পর আমি আশা ছেড়ে দেই,
একদিন নীলাঞ্জনা ও ওর সব বান্ধবীরা মিলে ফুচকা খাচ্ছিল তো আমি সাইট থেকে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখন ওর যে বান্ধবী কে দিয়ে আমি আমার ভালোবাসার কথা বলিয়েছিলাম, ওই বান্ধবীটি নীলাঞ্জনাকে বললো ওই দেখ নীল যাচ্ছে।
তখন নীলাঞ্জনা বলে উঠলো আরে ও নীল!
ওর বান্ধবী, হ্যাঁ ওর কথাই তো বলেছিলাম তোকে।।
তার পর যখন আমি টিউশনে যেতাম নীলাঞ্জনা আমার সামনে এসে বসতো, আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করতো কিন্তু আমি তখন পাত্তা দিতাম না,
এইরকম ভাবে কয়দিন চলতে থাকে,
তার পর হঠাৎ একদিন আমি, একটা ছোট কাগজে ওকে লিখে দেই আর বলি প্লিজ এখন পরবে না ঘরে গিয়ে পরে নিয় ,
কিন্তু ও আমার কথা না মেনেই কাগজটা খুলে পড়ে নে, কাগজের মধ্যে লিখা ছিল, তোমার ফোন নম্বরটা কি আমি পেতে পারি?
আর আমাকে উত্তরটা ও সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেয় যে না প্লিজ আমি আমার নম্বর কাউকে দেই না, এই বলে চলে যায়।।
আর ঠিক ওইদিনই যখন আমি ঘরে বসে ছিলাম তখন আমার ফোনে একটি মেসেজ আসে,
মেসেজে লিখা ছিল হাই আমি নীলাঞ্জনা আমি তোমার নম্বরটা আমার বান্ধবীর থেকে নিয়েছি,
তার পর আমাদের মধ্যে অনেক কথা হতো মেসেজ আর ফোনে,
একজন আর একজনের সাথে সম্পর্ক গভীর হতে থাকে।
আমি তখন নীলাঞ্জনা কে আমার ভালোবাসার কথা বলতাম তখন ও বলতো এখন এসব কিছু না সামনে পরীক্ষা সেটা আগে শেষ হয়ে যাক,
এরকম সব চলতে থাকলো পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেল, তখন নীলাঞ্জনা আমাকে কোনো উত্তর দিচ্ছিল না।
তার কিছু দিন পর আমার একটা কাজে আমি কলকাতা চলে যাই আর ওকে বলি আজ থেকে তুমি আমার সাথে কোন কথা বলবে না,
তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না তো তোমার কষ্টও হবে না বলে আমি ফোন বন্ধ করে রেখে দেই ২ দিন ।
২ দিন পর যখন ফোনটা চালু করি তার সঙ্গে সঙ্গেই নীলাঞ্জনার ফোন,
ফোনে কাঁদছিল, তো আমি বললাম কাঁদছো কেন?
আমি তো তোমার কেউ নয় কাঁদতে হবে না, তাছাড়া আমাকে ফোন কেন করলে, প্লিজ ফোন টা রাখো।।
নীলাঞ্জনা তখন কাঁদতে কাঁদতে বলে না প্লিজ ফোন রাখবে না প্লিজ,
আমি তখন কেন আমি তো তোমার কেউ নয়,
উত্তরে নীলাঞ্জনা, না তুমি আমার সব কিছু, আমি তোমাকে ভালোবাসি,
আমি বললাম কি!?
নীলাঞ্জনা :- হ্যা আমি ভালোবাসি তোমায়
ওইদিন ছিল ২ ফেব্রুয়ারি, আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন ,
( চতুর্থ অধ্যায়)
তার কিছু দিন পর আমি শহরে ফিরে আসি,
নীলাঞ্জনার সাথেও অনেক সুখী ছিলাম,
আমরা প্রথম বা দেখা করি ৭ মার্চ, টিউশন থেকে ফিরতে সময়,
ওর সঙ্গে কাটানো প্রত্যেকটা দিন আমার জন্য বিশেষ হয়ে উঠে।
আমি ভাবনার বাইরে ছিল আমার মত একটা ছেলে প্রেমে পরেছে।।
এক একটা দিন আমার জন্য remarkable ছিল আমাদের প্রথম hug ১২ এপ্রিল।
আমি আস্তে আস্তে ওর প্রেমে গভীর হয়ে পরে ছিলাম সব সময় শুধু নীলাঞ্জনা আর নীলাঞ্জনা।
কিছু দিন পর আমি ওকে আমার ঘরে ও নিয়ে আসি, পুরো দিনটা এক সাথে কাটাই দিন টি ছিল জুনের ৫ তারিখ।
কিন্তু আমাদের প্রেমের সবচেয়ে খারাপ দিন আসে আআগস্টের ১১ ,
ওইদিন নীলাঞ্জনার এক বান্ধবী আমাদের সম্পর্কের কথা জেনে নীলাঞ্জনার পরিবার কে জানিয়ে দেয়।
ওই দিন নীলাঞ্জনাকে ওর ঘরের মানুষ অনেক মারধর করে, এবং আমাকে ডেকে নেয় ওদের ঘরে। ওদের ঘরে ডেকে নিয়ে আমাকেও অনেক কথা শুনায় ওর পরিবার ।
কিন্তু নীলাঞ্জনা এতো অত্যাচার সহ্য করার পরও বলছিল যে আমি নীল কে ভালোবসি।
ওই দিন থেকে ওর প্রতি ভালোবাসা আরও বেড়ে যায় আমার।।
ওইদিন পর থেকে ওর ঘরের মানুষ ওর মোবাইল নিয়ে নেয়, ঘর থেকে বের হওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়।
আমি তো ভেবেছিলাম সব কিছু শেষ।
তার কিছু দিন পর হঠাৎ আমার মোবাইলে একটি ল্যাণ্ড নম্বর থেকে ফোন আসে, গলার স্বর শুনে বুঝতে পারলাম যে ও নীলাঞ্জনা।
টিউশন ও শেষ হয়ে গিয়েছিল আমাদের।
ও যখন কলেজ যেতো কলেজের বান্ধবীদের ফোন দিয়ে আমার সাথে কথা বলতো, কলেজ থেকে ও যখন ঘরে ফিরতো তখন দেখা করতাম মিলামিশা সব বন্ধ হয়ে যায় আমাদের ।
তার পর আসে ৩ অক্টোবর ওর জন্মদিন, ওইদিন ওর বান্ধবীরা আমার কাছে নিয়ে আসে ওকে, অনেক দিন পর ওইদিন আমারা অনেক সময় কাটাই।।
এই ভাবে আমাদের ৫টা বছর কেটে, ওর সাথে না আমি মিলতে পারতাম না ভালো করে কথা বলতাম। ওর মায়ের ফোন দিয়ে কখনো ফোন করতো কিন্তু কিচ্ছু বলতো না আমি একা পাগলের মতো কথা বলে যেতাম, ও আমকে চিঠি পাঠাতো ওর ভাই, বোন আর বান্ধবীদের দিয়ে।।
এই ভাবে চলছিল আমাদের দিন তবুও ওকে ছাড়ার কথা জীবনেও ভাবিনি। করণ ভালোবাসা সত্যিকারের ছিল।।
এভাবে কিছু দিন যাওয়ার পর ও আমকে ফোন করে আর বলে ও নাকি acting class ভর্তি হতে চায়, তো আমিও বললাম ভালো কথা, করো তোমার মন যা চায়।
এই ভাবে ক্লাস করতে করতে দুটো মিউজিক ভিডিওতে সুযোগ পায়,
তারপর একদিন বললো ও নাকি কলকাতা যাবে একটা ফ্লিমের কাজে, তখন আমি ওকে যেতে দেই শুধু যাবার আগে দেখা করেছিলাম আর বলেছিলাম, কলকাতা গিয়ে আমাকে ছেড়ে দিও না।।
উত্তরে নীলাঞ্জনা বলে কি যে বলছো তুমি, আমি শুধু তোমার গো আর দেখ নতুন ফোন ও কিনেছি ওইখানে গিয়ে আমরা কথা বলতে পারবো ।।
তার দুদিন পর চলে যায় ও কলকাতা,
কলকাতা যাবার পর ও আমাকে সময় দিচ্ছিল না, ফোন করলে ফোন তুলতো না, আমি ভাবতাম ও কাজে ব্যাস্ত।
এইভাবে এক সাপ্তাহ যাবার পর আমি নীলাঞ্জনা কে তোমার কি হয়েছে আমার সাথে কথা কেন বলো না , আমি কি করেছি
কিছু সময় চুপ করে থাকার পর বললো, নীল তোমার প্রতি আমার ফিলিংস চলে গেছে।
এই কথা শুনে আমি কি বলবো আমি বুঝতে পারছিলাম না।
তখন আমি বললাম আমার দোষ কি।
নীলাঞ্জনা বললো আমি জানি আমি কিছু জানিনা,
তুমি আমার জন্য ঠিক না,
এই বলে ফোন রেখে দিলো সব কিছু তে ব্লক করে দেয় আমাকে ওই দিন ছিল ১০ নভেম্বর।।
অনেক দিন কাটে যাবার পর আজ আমি অজানা,
আমার দোষ টি আজও জানতে চাই।।
( অভিজিৎ পুরো ডাইরিটা পরা শেষ করলো )
অভিজিৎ ফোন করে সৌমিত্র কে :- সৌমিত্র, কাল অফিসে জলদি এসো পুরো গল্পটা পরলাম ওর এই গল্পটাতে অনেক তারিখের উল্লেখ করেছে , ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ এপ্রিলের খুনের তারিখের সঙ্গে, ওর ডাইরির ৩টা তারিখ মিলে গেছে। আমি sure পরের খুনটা ও ওর ডাইরির তারিখের সঙ্গে মিলিয়ে করবে।
সৌমিত্র :- স্যার, কি বুঝলেন পরের খুন কবে তাহলে?
অভিজিৎ :- ৫ জুন ।।
পঞ্চম অধ্যায়
তার পর দিন পুরো টিমকে নিয়ে অভিজিৎ
ভালো করে শুনো সবাই।
এই খুনি সব কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের মধ্যে ওর প্রেমিকাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। তাই ওর প্রেমিকার শাস্তিটা অন্য মেয়েদের দিচ্ছে।।
আর ওর পরের খুন ৫ জুন।
অরিন্দম :- তবে স্যার আমরা কি এতো দিন অপেক্ষা করবো?
অভিজিৎ:- কিছু করার নেই ওক হাতেনাতে ধরতে গেলে অপেক্ষা তো করতে , সাধারণ মানুষের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে ওই খুনি কোথায় খুঁজবে ওকে, বাড়িতে ও যাচ্ছে না ও ।
আর ওর পাড়ার মনুষ মানতে রাজি না নীল খুনি কেউ কিছুই বলছে না, আর শুধু ছন্দ ছাড়া আমাদের কাছেও কোনো প্রমাণ নেই।।
সৌমিত্র :- স্যার ঠিক বলছে ওক হাতেনাতে ধরতে হবে আমাদের।
অভিজিৎ :- চারটে কলেজ আছে আমাদের শহরে,
চারটা টিম বানাতে হবে আমাদের।
আজ থেকেই চারটা কলেজের সামনে পাহারায় লাগিয়ে দাও ওদের।
এই ভাবে কয়েকটা দিন গেল,
আসলো ৫ জুন,
সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তা সব কটা কলেজের পাশেই ।
কখন আসবে সেই খুনি অপেক্ষায় সব, কিছু মেয়ে পুলিশ কর্মীদের ও কলেজ স্টুডেন্ট বানিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হল।
ঘন্টার পর ঘন্টা, সময় যাচ্ছে কিন্তু খুনির কোনো খবর নেই।।
অবশেষে দিন থেকে সন্ধ্যা সন্ধ্যা থেকে রাত নেই পাত্তা কোনো খুনির।
অভিজিৎ সৌমিত্র কে :- সৌমিত্র হয়তো এই কড়া নিরাপত্তার কথা জেনে গেছে খুনি, হয়তো পালিয়ে গেছে বা লুকিয়ে গেছে, এবার ঘরে চলো রাত অনেক হলো।।
সৌমিত্র হ্যা স্যার চলুন,
তখন হঠাৎ ফোন বেজে ওঠে অভিজিৎ এর।।
অভিজিৎ :- হ্যালো ইনিপেক্টর অভিজিৎ বলছি, কে আপনি, কি!!!
আচ্ছা আসছি।।
সৌমিত্র :- কি হলো স্যার?
অভিজিৎ :- সৌমিত্র আমরা আবার হেরে গেছি ওই খুনির কাছে।
আবার একটি লাশ পাওয়া গেছে পার্কের সামনে। আর এবার কোনো মেয়ের নয় খুন হয়েছে ছেলের।।
খুনের জায়গায় গিয়ে পৌছালো অভিজিৎ এবং সৌমিত্র
সৌমিত্র :- স্যার বিষ দিয়ে খুন করেছে স্যার, খুনটা এমন ভাবে করেছে যেমন লাগছে আত্মহত্যা।।
অভিজিৎ :- দেখ সৌমিত্র কোনো লেখা ছেড়ে গেছে নাকি খুনি।।
সৌমিত্র:- (খোঁজার পর) হ্যা স্যার এবার তো মনে হচ্ছে চিঠি রেখে গেছে ।
অভিজিৎ :- দেখি তো, (অভিজিৎ চিঠিটা পরতে থাকে )
খুনির চিঠি :- ভালো আছেন স্যার, আশা করছি আপনি আমার ডাইরিটা পরেছেন। আর প্লিজ স্যার ডাইরিটা যত্ন করে রাখবেন,
আর হ্যাঁ স্যার আমি একের পর এক খুন করে যাচ্ছি।
কারণ সমাজে এই রকমের মেয়েদের জন্য কতো ভালো ভালো ছেলেদের জীবন নষ্ট হয়ে যায়,
একটা ছেলে যখন মন প্রান দিয়ে মেয়েটিকে ভালোবাসে মেয়েটি কে নিয়ে স্বপ্ন দেখে, তা ছাড়া স্বপ্ন গুলো দেখায় ও সেই মেয়ে গুলোই। ।
তারপর হঠাৎ স্বপ্ন গুলোও ভেঙ্গে দেয় সেই মেয়ে গুলোই।
এতো দিন এতো বছর ভালোবাসার পরেও এক নিমিষে ছেড়ে চলে যায়। স্যার ওরা ভালোবাসা খোঁজে না ওরা খোঁজে ভালো option ।
আমারা বলি আমারা দেখি ধর্ষণ শুধু মেয়েদের হয় , কিন্তু স্যার এইরকম ভাবে মেয়েরাও ধর্ষণ করে ছেলেদের। এই ধর্ষণটা শুধু না দেখা।
এইজন্য তিলে তিলে মরতে হয় আমাদের, আর স্যার সেই তিনটে মেয়েকে খুন করার কারণ,
ওই মেয়ে গুলোও অনেক গুলো ছেলের জীবন নিয়ে খেলছিল। কে অধিকার দিয়েছে ওদের ছেলেদের জীবন নিয়ে খেলার?
তা ছাড়া আপনি আমাকে কখনো দেখেন নি, হয়তো দেখার অনেক ইচ্ছে হয় আমাকে তাই না স্যার?
তো দেখেনিন আপনার সামনে পরে থাকা লাশটা আমিই।।
মুছে গেছি আমি আজ।
আসবো না ফিরে আমি আর।
হয়তো ছিলাম কারো ঘৃণার পাত্র,
হয়তো কারো ভালোবাসার ।
ফিরে দেখবে না কেউ আমাকে আজ ।
আমি ডাকবো না তোমাকে,
আমায় দেখবে না ভিড়েতে ।
আমি হারিয়েছি নীলেতে,
হয়তো কারো লেখা হয়ে আছি, আমি আজ।।
ইতি - নীল
Comments
Post a Comment