ঘর বন্দি

21/02/2018  এর কথা বলছি
 আমি আমার প্রিয় শহর থেকে বাইরে ছিলাম
আমি এমনই এক কাজ ভালোবাসি যে কাজে আমার প্রায়ই বাইরে থাকতে হয়, কাজটা হলো ফোটোগ্রাফি।
বাইরে থাকাটা অনেকই মজার । কয়েক দিন পর পরই নতুন মানুষ  নতুন শহরের সাথে দেখা হয় আমাদের ,
আমরা তিন বন্ধু এই কাজে জড়িত ,
প্রায়ই রেলের পথে যেতে হতো দুর দুরান্তে ,

অজানা শহরে ঘোরাফেরার মজার সাথেও ঘঠে যেতো অনেক আজব ঘটনা ,
এমনই এক আজব ঘটনা আজ তুলে ধরছি আমি
আপনাদের কাছে ,

আমরা পৌঁছালাম ধর্মনগর শহরের, একটি লজে ,
কাজটা আমাদের দিব্বি চলছিল,  কাজের সাথে সাথে আমাদের নিয়মিত মজা করে যাচ্ছিলাম।

 দিনটি ছিল আমাদের কাজের তৃতীয় দিন ,
যেদিন থেকে লজে ছিলাম কাজ আর মজা তো করছিলাম কিন্তু প্রথম দিন থেকেই কেমন একটা অশান্তি পিছু করেছিল আমাদের ,
না ঘুমাতে পারতাম না কিছু কাজ করতে পারতাম।
আমরা ছিলাম দুজন আমি আর সুমিত , আর আমাদের আর একজন সঙ্গি সুদিপ তখনও  এসছিল না।

তার দুদিন পর কাজটা ছিল  রাতে,  আমার  শরীরটা ঠিক না থাকায় আমি কাজে যেতে পারিনি, তো সুমিত বললাম ভাই তুই আজকে কাজটা করে আয়  আমার শরীরটা ঠিক ভালো লাগছে না। তো সুমিত বললো ঠিক আছে তুই রেষ্ঠ নে আমি কাজটা করে আসছি, এই বলে সুমিত কাজে চলে যায়।
আর আমি তখন  লজে একা ।

লজের রুমটা অনেকটা বড় ছিল, ২টি  বিছানা ছিল ,
রাতের কিছু সময় যাওয়ার পর আমার সময় কাটছিলনা বলে Social media গুলোতে ঘোরাঘুরি করছিলাম  ,

 ঠিক তখনই আমার নজর গেলো আমার সামনে আয়নাটার দিকে ওই আয়নাটা দিয়ে দেখা যেত আমার পাশের বিছানাটা।
    আয়নাতে দেখতে পাওয়া বিছানার দিকে  তাকিয়ে আমি চমকে উঠলাম , দেখলাম আমার পাশের বিছানায় কে যেন বসে আছে ,
প্রথমে দেখে চমকে উঠলাম তারপর ভাবলাম হয়তো মনের ভুল ।
কিছু সময় পর আবার আয়নার দিকে দেখলাম তখন দেখলাম  কে যেন সত্যি বসে  আছে কিন্তু মুখটা কোনো ভাবেই দেখতে পারছিলাম না ,
ভূত বা এসব কিছু আছে তা আমি বিশ্বাস করতাম না  তাই তখন পর্যন্ত  বুঝতে পারছিলাম না যে লোকটা কে।
কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না কি করবো,
তখন আমি মনে মনে ভাবলাম জিজ্ঞেস করবো যে  লোকটা কে,  আর আপনি আমার রুমে কেমন করে আসলেন ?

আর তখন পাশের বিছানার দিকে যেতেই দেখি লোকটা নেই!
তা দেখে আমি একটু ঘাবড়ে যাই , কি করবো কাকে ডাকবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
আর তখন ভয় পেয়ে আয়নাটেকে আমার এক Shirt দিয়ে ঢেকে দিয়ে আমার বিছানায় বসে পরি ,
কিছু সময় পর,
আবার আমি আমার মোবাইল টা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলাম আর ভাবতে থাকলাম আমার মনের ভুল ছিল ।
মনের ভয়টাকে সরানোর জন্য ফোন করে একটা বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলতে থাকি,
আর তখনই ঘটলো আর একটি ঘটনা ...
তখন দেখলাম আমার সামনে দিয়ে কে যেন আসা যাওয়া করছে , তখন কাউকে তো দেখছিলাম না শুধু একটা ছায়ার মতো কি একটা ছিল , লজে কেউই ছিল না যে ডেকে বলবো,  ওই রাত্রিটা এই ভাবেই কেটে গেল।
তার পর দিন সকাল ৫টায় সুমিত এসে দরজাতে ধাক্কা দিতেই আমি আওয়াজ দিয়ে বললাম দারা খুলে দিচ্ছি,
সুমিত আমাকে জাগনা দেখে বললো কিরে ঘুমাসনি সারা রাত, তখন সুমিত কে বললাম নারে ঘুমিয়ে আসেনি, তাছাড়া তুই ঘুমা এমনিতেই সারা রাত কাজে ঘুমাতে পারিসনি , তখন সুমিত কে রাতের কোনো কথাই বলিনি আমি। 
কিছু সময় পর ঘুমিয়ে পরলাম দুজন ,
হঠাৎ ১১টা নাগাদ সুমিতের ডাকে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় ,
আমি সুমিত কে বললাম ডাকছিস কেন?
তখন সুমিতের কথায় বুঝে গেলাম সত্যি এই রুমে কিছু একটা আছে ,
সুমিত বললো ও যখন ঘুমোচ্ছিলো তখন নাকি ওকে পেছন থেকে কে ধাক্কা দিয়েছে আর অল্পের জন্য বিছানা থেকে পরে যেতে ছিল ।
তার পর আমি সুমিত কে রাতের ঘটে যাওয়া
 ঘটনার কথা বললাম  , তা শুনে সুমিত বললো আমি তোকে আগেই বলেছিলাম এই রুমে কিছু আছে ।
তার পর থেকে ঘটে যাচ্ছিল একের পর এক ঘটনা
তার পর এই ঘটনা গুলো থেকে আস্তে আস্তে মজা পেতে শুরু  করলাম ,
তার  পর সুদিপ আসলো আর ওকে কিছু বললাম না ,
কিন্তু ওই দিন রাতেই সুদিপ  সব কিছু বুঝতে পারলো  ,,
তার পর অনেক ধরণের ঘটনা ঘটলো  যেমন কারো কান্নার আওয়াজ শুনতাম  , আর রুমে শুধু মেয়েদের চুল পেতাম আরও অনেক কিছু।
এই সবকিছুর মধ্যে দিয়েই আমরা আমাদের মজা করে যেতাম, অনেক সময় আমারা ড্রিংক করে, ওই না দেখা ভুতের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করতাম,
আমাদের বিছানার মধ্যে যখন চুল পেতাম তখন অনেক খুশি হতাম এই বলে যে ভুতটা হয়তো মেয়ে।
৯ দিন কাটাই আমরা এভাবে,

তার কিছু দিন পর আমাদের কাজ শেষ হবার পর আমারা ফিরে আসি আমাদের নিজের শহরে।।

শহরে ফেরার পর আমি আমার আগের মতো কাজে লেগে গেলাম,  ফটোশুট,  সখের লেখা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলাম,
আর নিজের মনের মানুষটাকে নিয়েও সময় কাটাতে থাকলাম।
তার কিছু দিন পর একটা বড় কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরলাম কাজের জন্য না ঠিক ভাবে খাওয়া হচ্ছিল না ঘুম,
 
দিনটা ছিল কাজের শেষ দিন তো ঘরে এসে নিজের রুমটা বন্ধ করে একটা সিগারেট টেনে  শুয়ে পরলাম আর মাকে বলেছিলাম না ডাকার জন্য।

রাতের ঘুমটা হচ্ছিলো না বলে আমার লেখার টেবিলে গিয়ে বসলাম , কিছু লিখার চেষ্টা করছিলাম, ঠিক তখনই আমার প্রিয় মানুষটির ফোন আসে কাজের চাপে ওকে সময় দিতে পারিনি বলে আমার উপর চেচাচ্ছিল, আমি কোনো মতেই ওকে বুঝতে পারছিলাম না তখন আমিও রাগে ফোনটা রেখে দেই, আর তখন  আরও একটা সিগারেট টেনে আবার লিখতে বসে গেলাম, লিখতে লিখতে কোন সময় যে  আমি লেখার টেবিলেই ঘুমিয়ে পরি নিজেই বুঝতে পারিনি। কিন্তু ঘুমটা আর বেশি সময় হয়নি ঘুমের মধ্যে বুঝতে পারছিলাম কি একটা বিকট আওয়াজ আপছা ভাবে আমার চারিদিকে ঘুরছে, আর তখন হঠাৎ ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। ঘুম ভাঙ্গার কারণ এক  স্বপ্ন। আমার গলা টিপে ধরেছে এক আজব বিকট চেহারা,  হাঁফিয়ে উঠলাম ঘুম থেকে।
উঠে দেখলাম ওই বিকট চেহারা ওয়ালা বসে আছে পাশের বিছানায়, কি চেহারা বাপরে চোখ দুটো যেমন বেরিয়ে আসছে গলাটা ফুলে আছে আর যেমন রক্ত ছাড়া মানুষ।
আমি একটু ঘাবড়িয়ে বললাম,
"কি ভায়া কি কাজে গলা টিপছিলে আমার ?"
বিকট চেহারা ওয়ালা বলল,
"আমার দুঃখ হয়, হিংসে হয়, আমিও চাই ঘুমাতে, ইচ্ছে হয় স্বপ্ন দেখতে।
আমি বললাম,
"তো ঘুমাতে কে না করলো তোমায়, যতো ইচ্ছে ঘুমাও  তাছাড়া ভূত হওয়ার কারণ কি?
আর ভূত হয়ে আমার গলাটাই পেয়েছ টিপতে?"

ভূতের উত্তর,
"তোমার গলা টিপতে যে বড় শান্তি পাই,
না ঘুমানোর স্বাদটা যে তোমাকে দিতে চাই
আমার মনের দুঃখ আজ তোমায় বলতে চাই।"
তোমার পিছু তো সেই লজ থেকে করছি।

আমি বললাম,
ও আচ্ছা সেই লজে বাপু তুমি ছিলে,
আমি তো ভেবেছিলাম কোনো মেয়ে ভুত!
আর তোমারও আবার মনের কথা আছে ?
আচ্ছা বল, আমিও আজ শুনতে চাই।"

ভূত: হ্যাঁ ভূত হওয়ার আগে তো মানুষই ছিলাম, লিখা লিখি করতাম, সখ ছিল কবি টবি হব, আজ ভূত হয়ে বসে আছি।
কিছু সময় চুপ করে থাকার পর বললো

সিগারেট হবে?

আমি: তুমি সিগারেটও খাও? আচ্ছা দিচ্ছি, আচ্ছা কবি ভূত আর বল তোমার কাহিনী,  
কি লিখতে তুমি ?

ভূত: আমার মৃত্যুর আগে আমি অনেক স্বপ্ন দেখতাম, স্বপ্নগুলো না ঘুমিয়েই দেখতাম। লিখতাম তো অনেক কিছু নিয়েই, বেশির ভাগ লেখা গুলো বর্তমান নিয়ে, মানে বর্তমানের সমস্যাগুলো নিয়ে। কিছু দিনের মধ্যে প্রেমেও পড়েছিলাম। তারপর থেকে আমার লেখাগুলোর মধ্যে ওকে নিয়ে এলাম। জানো বন্ধু,  আজ আমি মরে গেছি কিন্তু আমার মনটা আজও জ্যান্ত ওর জন্য।
মানবী নাম ছিল ওর, অনেক বেশি ভালোবাসতাম ওকে, যা বলতো তা করতাম, যা চাইতো তা দিতাম।

তখন কবি ভুত আমকে বললো বন্ধু তোমাকে একটা কবিতার ছন্দ বলছি সেটা লিখো।
তো আমি আমার ডাইরি বের করে বললাম হ্যাঁ বলো লিখছি,

তখন কবি ভুত ছন্দটা বলতে শুরু করলো,

"মরে গিয়েও আজও লিখি ওকে নিয়ে,
মরে গিয়েও আজও শুনি ওকে মনে,
মরে গিয়েও আজও ভাবি ওর সুখ নিয়ে,
মরে গিয়েও আজও লিখি ওকে নিয়ে।।"

তখন ছন্দটা লিখে আমি বললাম: এতো ভালোবাসতে? আচ্ছা তাহলে তুমি মরলে কিভাবে?

কবি ভূত: এতো ভালোবাসতে মানে ? আজও ভালোবাসি, আজও ওর দুঃখ হলে আমি ছুটে যাই,
কিন্তু ওর চোখের জল মুছে দিতে আজ অন্য কেউ আমি নই।
আমার ভালোবাসায় কিছু কম ছিল যার কারণে আমার হাতটা ছেড়ে চলে যায় ও হয়তো আমার থেকে আরো ভালো কাউকে পেয়েছিল।  আর এই ওর ছেড়ে যাওয়াতেই তিলে তিলে মরতে থাকি আমি।
শেষে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিয়েছিলাম।
এতোটাই স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম আমি যে আমার মায়ের কথাও ভাবিনি, আজও কাঁদে আমার মা, আর ওই মেয়েটি আমার মৃত্যুর পর আমাকে চিনতেই পারেনি, এটাই আফসোস ।
যার জন্য এতো কিছু করলাম নিজেকে শেষ করে দিলাম,
সেই ভালবাসা আমাকে চেনলো না আমার লাশটাও এসে দেখলো না শেষ বারের মতো ,
আর যে মা আমাকে ১০ মাস গর্ভে ধারণ করেছে, অনেক সময় নিজে না খেয়ে আমাকে খাইয়ে দিয়েছে, সেই মার কথা একবারও ভাবিনি আমি।

বলে কাদতে থাকে কবি ভুত।

হঠাৎ মায়ের চিৎকার, "এই ওঠ কটা বাজে দেখলি আর কত ঘুমাবি?"
মায়ের ডাকে উঠে দেখি আমি আমার সেই লেখার টেবিলেই শুয়ে আছি,
আর তখন ভাবতে থাকলাম এটা  স্বপ্ন ছিল? টেবিল থেকে উঠতেই  দেখলাম  অর্ধেক সিগারেটটা পাশেই বিছানার নিচে পরে আছে, আর আমার ডাইরিতে কবি ভুতের সেই ছন্দটা লেখা আছে,

"মরে গিয়েও আজও লিখি ওকে নিয়ে,
মরে গিয়েও আজও শুনি ওকে মনে,
মরে গিয়েও আজও ভাবি ওর সুখ নিয়ে,
মরে গিয়েও আজও লিখি ওকে নিয়ে।।"

তাহলে এটা কি স্বপ্ন না সত্যি ?

                         - ধীমান কুড়ি

Comments